ইন্টারনেটের ব্যবহার দৈনন্দিন কাজগুলোকে সহজ করে দিয়েছে। পারস্পরিক যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান, কেনাকাটার মতো কাজগুলো ইন্টারনেটের বদৌলতে আগের তুলনায় অনেক কম সময়ে করা সম্ভব হচ্ছে। পরিসংখ্যানও বলে দিচ্ছে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়ে চলছে। আর ওয়েবসাইটগুলো নিয়মিত দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ই-মেইল, অনলাইনে কেনাকাটা, ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো জনপ্রিয়তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ব্যবহারকারীদের।
সফটওয়্যার ও অ্যাপ ইনস্টলে সতর্কতা
কম্পিউটার বা মোবাইল যে যন্ত্রের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে, প্রথমে সেটির সুরক্ষা প্রয়োজন। যতগুলো সফটওয়্যার বা অ্যাপ ইনস্টল করা আছে সেগুলো নির্দিষ্ট কী কী কাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, তা জানা থাকতে হবে। নতুন কম্পিউটার কেনার পরে না চাইতেই অনেক অনেক সফটওয়্যার ইনস্টল করে দেওয়া হয়, কিন্তু সেগুলোর কোনো প্রয়োজন আছে কি না, সেটি জেনে নেওয়া উচিত।
ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় অথবা অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করার সময় বিজ্ঞাপনের মধ্যে বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফারসহ নতুন নতুন অ্যাপ ইনস্টল করার পরামর্শ দেওয়া হয়। নতুন যা কিছুই ইনস্টল করা হোক না কেন, ইনস্টল করার আগে সফটওয়্যারটি কী কাজের সেটি খুঁজে দেখতে হবে। অজানা সোর্স থেকে ইনস্টল করা হলে ক্ষতিকর কোনো প্রোগ্রাম ইনস্টল হয়ে যেতে পারে।
অনলাইনে নিরাপদ থাকা প্রসঙ্গে নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেন, সতর্ক না থাকলে বিভিন্নভাবেই ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। আর ইনস্টল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে সেটি বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে থাকবে এমন না, কখনো কখনো নির্দিষ্ট কম্পিউটারের ক্ষতি না হলেও এটিকে হোস্ট হিসেবে ব্যবহার করে অপর কোনো কম্পিউটার বা নেটওয়ার্কের ক্ষতি করা সম্ভব।
পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা
ইন্টারনেটে যুক্ত যে সেবা বা অ্যাপলিকেশনই ব্যবহার করা হোক না কেন, একটি ই-মেইল ঠিকানা ও পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে প্রবেশ করতে হয়। যোগাযোগের জন্য ই-মেইল ঠিকানাটি ব্যবহার হলেও পাসওয়ার্ড সব সময় গোপন রাখতে হয়। এবং একাধিক সেবা ব্যবহার করলে প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উত্তম। আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হলেও সহজেই যেন অন্য কেউ অনুমান করতে না পারে, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমানে সব ব্রাউজারেই পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তবে ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করা যেতে পারে কেবলমাত্র যদি ওই কম্পিউটারটি আপনি একা ব্যবহার করেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্য অথবা অফিসের কম্পিউটার যদি অন্যান্য সহকর্মীরাও ব্যবহার করেন, সে ক্ষেত্রে কখনোই সংরক্ষণ করা উচিত নয়। পাশাপাশি যতটা সম্ভব টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখতে হবে।
অনলাইনে কেনাকাটা
ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় বা শখের কোনো পণ্য কেনা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিল জমাসহ আরও নানা কাজে লেনদেন করা হচ্ছে। অনলাইনে লেনদেন করার সময় বাড়তি কিছু সতর্কতার প্রয়োজন আছে। যে সাইট থেকেই কেনাকাটা করা হোক না কেন ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের নম্বর লিখতে হয়। এখানে খেয়াল রাখতে হবে—
- যে ওয়েবসাইটে কার্ডের নম্বর লিখতে হচ্ছে সেটি নির্দিষ্ট ব্যাংক অথবা নির্ভরযোগ্য পেমেন্ট গেটওয়ের কি না যাচাই করা
- ব্রাউজারে ওয়েবসাইটের ঠিকানার শুরুতে ‘https’ লেখা না থাকলে ট্রানজেকশন না করা
- নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ছাড়া নতুন কোনো সাইট থেকে কেনার আগে যাচাই করা
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য এসএমএস সেবাটি চালু রাখা যেন লেনেদন হলে সেটি সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারেন
ই-কমার্স ওয়েবসাইট যাঁরা তৈরি করছেন বা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরও উচিত সাইট তৈরির সময় সাম্প্রতিকতম প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করা। সাধারণ ব্যবহারকারীদের পক্ষে সব সময় হয়তো নিরাপত্তার সব দিকগুলো জানা সম্ভব হয় না। আবার ওয়েবসাইট হ্যাক হলে সব ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি হয়ে বিশাল ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।
পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার হ্যাকিং বা অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার অন্যতম কারণ। পাইরেটের সফটওয়্যার ব্যবহারকারীরা প্রায় কখনোই সফটওয়্যার আপডেট করেন না, ফলে ত্রুটিগুলো কখনোই সমাধান হয় না। আর এই ত্রুটিগুলোর মাধ্যমেই অন্য কেউ ব্যবহারকারীর ক্ষতি করতে পারে। সফটওয়্যার অ্যাকটিভেশন বন্ধ করার জন্যও ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন টুল, যেগুলো প্রায় সময়ই অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তা ফায়ারওয়াল বন্ধ করে দেয়, ফলে ক্ষতিকর ওয়েবসাইট খুললেও কখনো বাধা দেওয়া না।
আবার ফিশিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য চুরির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। তাই ওয়েবসাইটটি দেখতে যেমনই হোক ব্রাউজারে ই-মেইল/ব্যবহারকারী নাম ও পাসওয়ার্ড লেখার সময় ওয়েবসাইটের ঠিকানাটি সঠিক কি না, দেখে নেওয়া উচিত। ব্যক্তিগত তথ্য অনাকাঙ্ক্ষিত কারও কাছে চলে যাওয়াটা ক্ষতিকর। তাই সব ব্যবহারকারীরই উচিত অনলাইনে নিরাপদ থাকার সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলা।
লেখক: নাসির খান, সফটওয়্যার প্রকৌশলী
Published on Prothom Alo on March 14, 2016 http://www.prothom-alo.com/technology/article/797836/