বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের মত কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখাও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। যে যত আগে এই বিষয়ে দক্ষ হতে পারবে সে ততটাই আগে এর সুবিধাগুলো নিতে পারবে। আর এই জন্য কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হতে হবে এমন নয়। বরং প্রোগ্রামিং শেখা উচিত স্কুল থেকে। কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই নিজের একটি ওয়েবসাইট থাকতে পারে যা তার নিজের তৈরী করা। আর যারা কলেজ জীবন পার করে এসেছেন তারা এখন শিখতে পারেন এবং এখন থেকেই চালু করতে পারেন নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
আমরা এখানে ধারাবাহিক ভাবে প্রোগ্রামিং শিখবো এবং সেগুলো নিজে নিজে চর্চা করবো। প্রোগ্রামিং ভাষা হিসাবে ব্যবহার করবো পিএইচপি (PHP)।
পিএইচপি অত্যান্ত জনপ্রিয় একটি প্রোগ্রামিং ভাষা। এটি জেনারেল পারপাস প্রোগ্রামিং ভাষা হলেও এটি তৈরী করা হয়েছিলো মূলত ওয়েব ডেভলপমেন্টের উদ্দেশ্যে। ১৯৯৪ সালে Rasmus Lerdorf নামের একজন প্রোগ্রামার সর্বপ্রথম এই প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরীর কাজ শুরু করেন। সেই সময় Personal Home Page এর সংক্ষিপ্ত হিসাবে PHP নাম দেয়া হয়েছিলো। বর্তমানে এটি পরিবর্তন করে করা হয়েছে Hypertext Preprocessor এবং এই প্রোগ্রামিং ভাষার মান উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছে পিএইচপি গ্রুপ।
পিএইচপি একটি ওবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা। এটি যেমন কমান্ড লাইন থেকে ব্যবহার করা যায়, তেমনি এইচটিএমএল (HTML) কোডের সমন্বয়ে বিভিন্ন ওয়েব অ্যপলিকেশন তৈরী করা যায়। পিএইচপি ভিত্তিক অন্যান্ত জনপ্রিয় বেশ কিছু কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম রয়েছে যেমন ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, দ্রুপাল ইত্যাদি, অপরদিকে লারাভেল ও সিম্ফনি রয়েছে জনপ্রিয় পিএইচপি ফ্রেমওয়ার্কের তালিকায়। পিএইচপি প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষতা থাকলে এগুলো ব্যবহার করে নানা কাজের অ্যাপলিকেশন তৈরী করা যাবে।
ব্যাকএন্ড বা সার্ভার সাইড প্রোগ্রামিং-এর জন্য পিএইচপি অধিক পরিচিত। পিএইচপি প্রায় সকল ধরনের অপারেটিং সিস্টেম থেকে ব্যবহার করা যায়। তাই উইন্ডোজ, লিনাক্স বা ম্যক যার যে যেমন কম্পিউটারই ব্যবহার করেন সেখান থেকেই শিখতে পারবেন। পিএইচপি প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে ডাটাবেজ সার্ভার থেকে তথ্য নিয়ে এসে প্রদর্শন করা যায়। এবং জনপ্রিয় প্রায় সবগুলো ডাটাবেজ সিস্টেমের সাথে পিএইচপি যুক্ত করে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। ফেসবুক, ইয়াহু, উইকিপিডিয়া, ওয়ার্ডপ্রেস, ফ্লিকার, বাইডুর মত ওয়েবসাইটগুলো তৈরী করা হয়েছে পিএইচপি প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে। শুধু তাই নয় বর্তমানে ইন্টারনেটের প্রায় ৮০ভাগ ওয়েবসাইট তৈরীতে কোনো না কোনো ভাবে পিএইচপি ব্যবহার করা হয়েছে।
পিএইচপি দিয়ে যে কোনো ধরনের অ্যাপলিকেশন তৈরী করা যায়। নতুন কিছু তৈরীর আগে প্রোগ্রামিং-এ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কোনো বিশেষ অ্যাপলিকেশন, সিএমএস বা ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহারে দক্ষ হওয়ার অর্থ এই নয় যে প্রোগ্রামিং-এ দক্ষতা এসেছে। তবে প্রোগ্রামিং-এ দক্ষ হলে নিজেই নতুন নতুন অ্যাপলিকেশন বা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরী করা যাবে।
কম্পিউটার ব্যবহারের সাধারণ জ্ঞান আছে বা শিখতে আগ্রহী এমন যে কেউই পিএইচপি প্রোগ্রামিং শিখতে পারবে। কোন বিষয়ে লেখাপড়া করেছে বা বর্তমানে পড়ছে এটি একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং কম্পিউটার বিজ্ঞান ছাড়া অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থী হলে প্রোগ্রামিং শেখার মাধ্যমে দলের অন্যান্যদের থেকে এগিয়ে যেতে পারবে। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জানা থাকলে লেখাপড়া, চাকরি, ব্যবসাসহ নানা ক্ষেত্রে এই জ্ঞান ব্যবহার করে উন্নতি করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ পাওয়ার বা সফল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং দক্ষতা একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
আমরা পিএইচপি ভাষা ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং এর বিভিন্ন দিকগুলো জানবো। পূর্বে কখনো প্রোগ্রামিং শেখেনে বা খুব সামান্য চর্চা করেছে এমনদের উদ্দশ্য করে ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। পিএইচপি শেখার জন্য পূর্বে থেকে কোনো কিছু শিখে রাখার প্রয়োজন নেই। শেখার শুরুতে আমরা কয়েকটি সফটওয়্যার ইনস্টল করবো, তবে সেগুলো কিভাবে কাজ করে তা প্রথমেই জানা প্রয়োজন নেই। ধাপে ধাপে আমরা পিএইচপি শিখতে থাকবো এবং কিছুটা দ্ক্ষ হওয়ার পরে ওয়েব প্রযুক্তির অন্যান্য নানা দিক, সিএমএস ও ফ্রেমওয়ার্ক ইত্যাদি সম্পর্কে জানবো।